Mahalaya
মহালয়া (Mahalaya)
মহালয়া বাঙালি সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেবীপক্ষের সূচনা ও পিতৃপক্ষের অবসান মহালয়ার দিনেই হয়। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতেই মহালয়া পালিত হয়। এদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ধরা হয়।
মহালয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুইটি প্রধান দিক—একদিকে দেবীপক্ষের আগমন, অপরদিকে পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ। পিতৃপক্ষের শেষ দিনে মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও পিণ্ডদান করেন। গঙ্গার ঘাটে, বিশেষত কলকাতার বাবুঘাট, আদি ঘাট, বা কাশীতে এই তর্পণের দৃশ্য বিশেষভাবে চোখে পড়ে। বাঙালি হিন্দু সমাজে বিশ্বাস করা হয়, এদিন পূর্বপুরুষদের আত্মা মর্ত্যে আগমন করেন এবং সন্তানের তর্পণ গ্রহণ করে তুষ্ট হন।
মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রেডিও সম্প্রচারের এক অনন্য ঐতিহ্য—বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী। ১৯৩১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সম্প্রচার আজও বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভোরবেলায় দেবী বন্দনা, সংস্কৃত স্তোত্র ও সংগীতের সঙ্গে ভদ্রর মহাকাব্যিক বর্ণনা বাঙালির দুর্গোৎসবের আবহ তৈরি করে। হাজার মানুষ রেডিওতে কানে কানে শোনেন সেই চেনা উচ্চারণ—“या देवी सर्वभूतेषु...”।
ধর্মীয় কাহিনি অনুসারে, মহালয়ার দিনেই দেবী দুর্গা মর্ত্যে আগমন করার জন্য যাত্রা শুরু করেন। দেবতাদের প্রার্থনায় মহিষাসুর বিনাশের জন্য মহাশক্তি দুর্গার অবতারণা হয়। তাই মহালয়া মানেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক আগমনবার্তা। গ্রামের পুকুরপাড়, শহরের অলি-গলি—সবখানেই বাজতে শুরু করে ঢাক, প্রতিমা গড়ার কাজে চূড়ান্ত রূপ দিতে থাকেন মৃৎশিল্পীরা।
শহুরে জীবনে মহালয়া একটি নস্টালজিয়া, আবার গ্রামীণ জীবনে এটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতি। কেউ পিতৃতর্পণ করতে ভোরে গঙ্গার ঘাটে যান, কেউ আবার ঘরে বসেই দেবীর আগমনী গান শুনে আপ্লুত হন। পরিবারে-পরিবারে সকলে একত্রিত হয়ে রেডিও বা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান শোনার প্রথা আজও বিদ্যমান।
মহালয়ার সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও কম নয়। কবিতা, গান, নাটক থেকে শুরু করে আধুনিক গণমাধ্যম—সব জায়গায় মহালয়া একটি বিশেষ আবহ তৈরি করে। বাঙালি পরিচয়ের সঙ্গে যেন অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িয়ে আছে এই দিনটি।
সব মিলিয়ে, মহালয়া শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়; এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। পূর্বপুরুষ স্মরণ, দেবীপক্ষের সূচনা, সংগীত ও আধ্যাত্মিকতার মিলনে মহালয়া বাঙালির কাছে আবেগ ও ভক্তির প্রতীক। বলা যায়, মহালয়া আসলে বাঙালির চিরন্তন উৎসবপ্রাণ মননের এক অনন্য প্রকাশ।
---
👉 এটি প্রায় ৫০০ শব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।
আপনি কি চান আমি এটিকে আরও স্কুল-রচনা ধরনের সহজ ভাষায় লিখে দিই, নাকি প্রবন্ধের মতো পরিশীলিত রূপেই রাখব?
Comments
Post a Comment